আমিরুল ইসলাম হারুন ঃ নোয়াখালীতে স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি বিভাগ লন্ডভন্ড আগামী মৌসমে চালের উৎপাদন কমবে ৮২ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন। সেই চিন্তা কৃষকদের মাথায় হাত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীতে ৩৩ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমির আমন ফসল বন্যায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৬০১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জমিতে চাল উৎপাদিত হওয়ার কথা ৭১ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন। অপর দিকে বন্যায় আমনের পাশাপাশি ৪ হাজার ৫২১ হেক্টর জমির আউশ ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ওই ক্ষতির কারণে আরও ১০ হাজার ৮৮৬ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন কম হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ বলেন, বন্যায় আমন, আউশ ফসলেরই শুধু ক্ষতি হয়নি; ক্ষতি হয়েছে আমন বীজতলা, শাকসবজি, পান, ফলবাগান, আখ, আদা ও হলুদের। তবে আমন, আউশ ও আমন বীজতলার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। এই ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে কৃষকদের মধ্যে তা বিতরণ করে ৮ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমিতে নতুন করে আমন লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এবারে আগাম বোরো চাষ ছাড়াও সবজি চাষে কৃষকদের আরও বেশি পরিমাণ সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে কৃষকেরা কিছুটা হলেও আমন ও আউশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।
আমন চাষের লক্ষ্যে বীজতলা বসিয়েছিলেন নোয়াখালীর কৃষক। বীজতলায় গজানো চারা খেতে লাগানোর উপযোগীও হয়ে উঠেছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় অতিবৃষ্টি। যা পরবর্তী সময়ে উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে বন্যায় রূপ নেয়। বন্যার পর কেটে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। খেতে এখনো প্রায় কোমরসমান পানি। ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই এবার আর আমন চাষ হবে না নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা গ্রামের এই কৃষকের।
খেতের বীজতলা নষ্ট হওয়া খুব মন খারাপ হয়েছে কৃষক সমাজের। কারণ, এখন বীজতলা বসানোর মতো জায়গাও নেই, পানি কমলে বীজতলা বসিয়ে জমিতে লাগাবেন। তাই সংসার কীভাবে চলবে, পরিবারের খাবারের জোগান কীভাবে হব—এমন নানা দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাঁর মনে। কৃষক গোলাম ছারওয়ারের মতো নোয়াখালীর আটটি উপজেলার হাজারো কৃষক এমন অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বন্যার কারণে আউশ ও আমন মৌসুমে নোয়াখালী জেলায় ৮২ হাজার ৫৭৯ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন কম হতে পারে। এর মধ্যে ৭১ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন আমন, আর ১০ হাজার ৮৮৬ মেট্রিক টন আউশের উৎপাদন কমতে পারে।
জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন সুবর্ণচর উপজেলার ১ নম্বর চর জব্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মালেকও। আজ বুধবার সকালে কথা হয় এই কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেড় একর জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলেন তিনি। কয়েক দিনের মাথায় শুরু হয় টানা বৃষ্টি। প্রথম ভেবেছিলেন, এক-দুই দিন পর বৃষ্টি কমে আসবে। কিন্তু বৃষ্টি কমেনি বরং বেড়েছে। এতে জমিতে লাগানো সব রোপা আমন ডুবে যায়। প্রায় চার-পাঁচ দিন ধানের চারাগুলো একেবারেই ডুবে ছিল পানিতে। পরে পানি কিছুটা কমে আসে।
তাঁর ৫০ শতাংশ জমির ফসল পুরোপুরি পচে গেছে জানিয়ে জনৈক কৃষক বলেন, তার বাকি এক একরের ফসল আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু ধানগাছের গোড়া থেকে চারা নিয়ে পচে যাওয়া চারার স্থানে লাগিয়েছেন। এতে ওই এক একরের অবস্থা মোটামুটি ভালো। অনেক জায়গা খোঁজ করেছেন, কোথায়ও আমনের চারা পাননি। পেলে আরেকবার লাগাতেন। এরপরও তাঁর কিছু জমির ফসল রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এলাকার বেশির ভাগ কৃষকের খেতের ফসলই নষ্ট হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পৈত্রিক কৃষি নির্ভর রাসেল বলেন, তিনি ধারদেনা করে প্রায় দুই একর জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছেন। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে। প্রায় আট দিন পানির নিচে ছিল পুরো জমির ফসল। এতে তাঁর সব ফসল পচে গেছে। এখন বীজতলা বসানোরও সুযোগ নেই।
You cannot copy content of this page